মোহাম্মদ মিজানুর রহমান আজাদ, ঈদগাঁও:

কক্সবাজার সদরের এক সময়ের ব্যস্ততম স্থান ঈদগাঁও টিএনটি অফিস যেন ময়লা-আবর্জনার স্তুপে পরিণত হয়েছে। পুরো ঈদগাঁও বাজারের ময়লা আবর্জনাগুলো টিএন্ডটি অফিসের পুকুরটি ভরাট করে যাচ্ছে। দেখলে মনে হয় বাজারের একমাত্র খোলা ডাস্টবিন। দূষিত ময়লা-আবর্জনা, বর্জ্য থেকে মুক্তি মিলেনি ঈদগাঁও টিএন্ডটি পুকুরের। টিন দিয়ে বেড়ার দেওয়ার পরও বাজারের ময়লা ফেলা থেকে রক্ষা করা যাচ্ছে না পুকুরটিকে। আবর্জনার বিশাল স্তুপ করে রাখা হয়েছে পুকুরের একপাশে। ঐ এলাকার যত মৃত হাঁস-মুরগী, কুকুর-বিড়াল ফেলার স্থান টিএন্ডটি পুকুর। মরা জীব-জন্তু পঁচে-গলে প্রতিনিয়ত দূষিত হচ্ছে পুকুরের পানি ও পরিবেশ। রোগ ছড়াচ্ছে পুকুরের চারপাশের ব্যবসায়ী এবং বসবাসকারী প্রায় হাজার খানেক মানুষের। শুধু তাই নয়, এসব দূর্গন্ধ হতে রেহাই পাচ্ছে না পুকুর পাড়ে অবস্থিত ২টি প্রাইভেট হাসপাতালসহ ২ ডায়াগনষ্টিক সেন্টারে আসা-যাওয়া অসংখ্য নিয়মিত রোগীসহ ভর্তি রোগীরা। পুকুর পাশর্^বর্তী জাগির পাড়া সড়ক দিয়ে প্রতিদিন চলাচল করছে স্কুল-কলেজ, মাদ্রাসায় পড়–য়া অসংখ্য কোমলমতি ছাত্র-ছাত্রীসহ প্রায় ৫ হাজার সাধারণ মানুষ। বাজারের এসব ময়লা ফেলায় সড়কের পানি নিষ্কাশনের ড্রেন ভরে গেছে অনেকদিন আগে। অর্থ যোগানদানকারী সম্ভাবনাময় এ পুকুরটি কার? কেন এভাবে সংস্কার না করে ফেলে রাখা হয়েছে, এমন প্রশ্ন অনেকের। বিশালাকার এ পুকুরটি সংস্কার করে মাছ চাষ করলে প্রতি বছর লাখ টাকা আয় করা কোন ব্যাপার নয়, এমন সম্ভাবনার কথা জানালেন কক্সবাজার যুব উন্নয়ন ইনষ্টিটিউটের মৎস্যবিভাগের এক শিক্ষক। অনেকেই মনে করেন, পুকুরটি সংস্কার করে মাছ চাষ করলে বার্ষিক একটি আয়ের পাশাপাশি এলাকার সৌন্দর্য্যও বৃদ্ধি পাবে অনেক। পাশর্^বর্তী ব্যবসায়ী হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এবং চারপাশে আবাসিক ভবনে বসবাসকারী লোকদের একমাত্র দাবী, পুকুরটি শীঘ্রই দূষণমুক্ত করা হউক। ময়লা-আবর্জনার পঁচা দূর্গন্ধে মানুষের দুঃখ-কষ্টের শেষ নেই। দুয়েক বছর ভাড়ায় এ পুকুরে মাছ চাষ করা হয়েছিল, কিন্তু এখন তা আর হচ্ছে না। পুকুর ভরা কচুরিপানা, বিষাক্ত কালো পানিতে মাছ তো দূরের কথা, পোকা-মাকড় ও হয়ত এখন নেই। আইন করেও ঠেকানো যাচ্ছে না দূষণ। মাঝে মাঝে দূর্গন্ধে নাক ভারী হয়ে আসলেও করার কিছুই থাকে না পাশের লোকদের। দূর্গন্ধ মেনে নিয়েই জীবন-যুদ্ধ চালাতে হচ্ছে ব্যবসায়ীসহ জনসাধারণের। সরেজমিনে দেখা মেলে, একটি মৃত বিড়ালের মাংস খাচ্ছে একঝাঁক কাক, পঁচা দূর্গন্ধের বাস্তব চিত্র। বিশেষ করে পুকুর পাড়ের ব্যবসায়ী ও বসবাসকারী মানুষগুলোর খুবই দুঃখ, কষ্টে জীবন যাপন করছেন।

উল্লেখ্য, বৃহত্তর ঈদগাঁওর একমাত্র গুরুত্ববহনকারী যোগাযোগ মাধ্যম ছিল ল্যান্ড ফোনের এ টিএন্ডটি অফিস। এ অফিসের রয়েছে ঐতিহ্যময় অনেক বছরের পুরনো অতীত ইতিহাস। বৃহত্তর ঈদগাঁওর বিশাল এ এলাকার একমাত্র বাণিজ্যিক কেন্দ্র বা বড় এক জনগোষ্ঠির মিলনস্থল ঈদগাঁও বাজার। এ জনগোষ্ঠির স্বার্থে দেশ-বিদেশে যোগাযোগের কথা চিন্তা করে তৎকালীন সময় ১৯৯০ সালে ডাক ও টেলিযোগ মন্ত্রণালয়ের অধীনে ঈদগাঁও ল্যান্ড ফোন টিএন্ডটি অফিসটি স্থাপিত হয়েছিল। যুগের পরিবর্তনের ফলে বর্তমানে শহর ছাড়িয়ে গ্রামে-গঞ্জে বিভিন্ন মোবাইল অপারেটর কোম্পানীর সেলফোন বা মুঠোফোন মানুষের হাতে হাতে চলে আসায় দীর্ঘদিনের পুরনো ল্যান্ড ফোনের কদর এখন আর নেই। বর্তমানে ঈদগাঁও টিএন্ডটি অফিসের গেইট ও ভবরে দরজায় ঝুলছে তালা। পুকুরটি সংস্কার বিহীন অরক্ষিত হয়ে পড়েছে।